মোঃ জাকিউর রহমান, ঢাকা প্রতিনিধি: জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও মুজিববর্ষ উপলক্ষে সারা দেশব্যাপী চলা বিভিন্ন আয়োজনের মতো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ব্যান্ড সোসাইটিও নানান কর্মসূচি গ্রহণ করে। তারই আলোকে গত ৩১ মার্চ বিকেল ৪ঃ০০ টায় টি.এস.সি প্রাঙ্গণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ব্যান্ড সোসাইটির আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয় হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও মুজিববর্ষ উপলক্ষে “পিতার জন্য গান” শিরোনামে একটি লিরিক লিখন প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের পুরষ্কার বিতরণ সমাপনী অনুষ্ঠান।

গত ১৭ই মার্চ থেকে ২৫ মার্চ ২০২২ তারিখ পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ব্যান্ড সোসাইটি এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছিল। বিজয়ী ৩ জনের হাতে পুরষ্কার তুলে দেন উক্ত অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এর সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, এমপি।

প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অধিকার করা ফৌজিয়া সুলতানা পলি আমাদের কাছে তার অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন- “যে কোন ভালো কিছুতে প্রথম হওয়াটা অবশ্যই অনেক আনন্দের, কিন্তু এ প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করার একটা প্রধান বিশেষত্ব হচ্ছে এটার শিরোনাম আর দ্বিতীয়ত যে বিষয়টা এট্রাক্ট করেছিলো সেটা হলো সেরা লিরিক হলে ভাইকিং ব্যান্ড এটা পরিবেশন করবে, আমার ব্যান্ড সঙ্গীতের প্রতি বরাবরই উইকনেস ছিলো। আসলে বঙ্গবন্ধু একজন বিশাল থেকে বিশালতর পার্সোনালিটি/ ব্যাক্তিত্ব , লিরিকের কয়েকটা লাইনে উনাকে আবদ্ধ করা অসম্ভব অনেকটা। উনাকে নির্দিষ্ট সাল,সময়,স্থানে আবদ্ধ করা যাবেনা। তাই বেছে নিয়েছিলাম ক্যারেক্টারাইজটিক্স, সেটাকে চ্যালেন্জ হিসেবেই নিয়েছিলাম যতোটা সম্ভব জাতির পিতার ক্যারেক্টারাইজটিক্স প্রকৃতি, পরিবেশ, বিভিন্ন ব্যাক্তিসত্তার মধ্য দিয়ে রিফ্লেকশনের মাধ্যমে পোর্ট্রে করতে।

জানিনা কতটুকু পেরেছি বাট হৃদয় থেকে অনুভব করে ভালোবেসে লিখেছি।আমি অনেক লাকি(সৌভাগ্যবান) এন্ড ব্লেস্ড( আশির্বাদপুষ্ট) যে আমি জাতির পিতাকে নিয়ে কিছু লেখার সুযোগ পেয়েছি। ঢাকা ইউনিভার্সিটি ব্যান্ড সোসাইটির পিতার জন্য সমগ্র বাংলাদেশ থেকে লিরিক আহ্বাণের উদ্যোগটি অবশ্যই সময়োপোযোগী ও প্রশংসার যোগ্য, জড়িত সবাইকে অনেক কৃতজ্ঞতা, সম্মান, ভালোবাসা জানাই। এটা একটা খুব কন্স্ট্রাকটিভ উপায় প্রতিভা প্লাস জাতির পিতার চেতনাকে ধরে রাখার। কারণ আমি বিশ্বাস করি সংস্কৃতির কোন ব্যারিকেড নেই, আর সে কারণেই কালচারাল এক্টিভিটিজের দায়বদ্ধতা অনেক,দায়বদ্ধতা মহাকালের গর্বিত বিষয়গুলোকে সম্মানের সাথে বয়ে নিয়ে যাওয়া প্রজণ্ম থেকে প্রজণ্ম।”

প্রতিযোগিতার দ্বিতীয় স্থান অর্জনকারী মিনহাজুল ইসলাম বলেন- “দেশের শ্রেষ্ঠ নেতার প্রতি নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করতে পেরে আমি খুবই আনন্দিত। এত বড় ইভেন্টে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে নিজের লেখা গান দ্বিতীয় স্থান অধিকার করায় খুবই ভালো লাগছে। আশা করি ভবিষ্যতে এরকম ইভেন্ট আরও হবে। আরও বড় পরিসরে আমরা বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করতে পারব।”

তৃতীয় স্থান অর্জনকারী আকিব হাসান জানান- “আসলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ব্যান্ড সোসাইটি আয়োজিত “পিতার জন্য গান” প্রতিযোগিতাটি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান কে সম্মান প্রদর্শন করা ও তার প্রতি তরুণ প্রজন্মের ভাবনা, চিন্তাধারার প্রকাশ ঘটানোর এক চমৎকার প্ল্যাটফর্ম বলে আমি মনে করি। ব্যান্ড সংগীত এমন একটি মাধ্যম, যার মধ্য দিয়ে বিশ্বের সকল তরুণকে একই সূত্রে গাঁথা যায়, যেহেতু পুরো বিশ্বেই ব্যান্ড সংগীত তরুণদের কাছে একইরকমভাবে সমাদৃত। আমার ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম নয়। ছোটবেলা থেকেই ব্যান্ড সংগীত থেকে শুরু করে সকল ধরনের গান কমবেশি শোনা হতো। জনপ্রিয় কিছু গান ঠোঁটে লেগেই থাকতো সবসময়। একটু যখন বড় হলাম, তখন থেকেই লেখালেখির সাথে যুক্ত থাকার চেষ্টা করেছি, সেটা কবিতা হোক বা গান।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটা জায়গায় চান্স পাওয়া নিঃসন্দেহে আমার জীবনের সবচেয়ে আনন্দের মুহূর্তগুলোর একটি। কেননা, এই প্রতিষ্ঠানকে এখনো দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ হিসেবে বিবেচনা করা হয় শুধুমাত্র এর শিক্ষার মানের জন্য নয়, এই প্রতিষ্ঠান মানুষের সাংস্কৃতিক, সামাজিক চিন্তাধারার পরিস্ফুটন ঘটিয়ে মানুষের মতো মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে সাহায্য করে। যখন শুনলাম যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ব্যন্ড সোসাইটি “পিতার জন্য গান” এর মতো একটি চমৎকার আয়োজন করছে, তখন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর প্রতি আমার লেখার মধ্য দিয়ে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জ্ঞাপন এর চমৎকার একটা সুযোগ হিসেবে মনে করলাম আমি। আমাদের জাতির পিতা সম্পর্কে, তার আদর্শ সম্পর্কে তরুণ প্রজন্ম এখনো অনেকাংশে অনবহিত ও অবিদিত।

তাই এই তরুণ প্রজন্মকে জাতির পিতার আদর্শে দীক্ষিত করার, তার অবদান, আত্মত্যাগ সম্পর্কে অবহিত করার এর চেয়ে ভালো কোন প্ল্যাটফর্ম হতে পারে বলে আমি মনে করিনা। এই লিরিক লিখন প্রতিযোগিতায় তৃতীয় স্থান অর্জন করা অত্যন্ত সৌভাগ্যের ব্যাপার বলে আমি মনে করি। আমার লেখার মধ্য দিয়ে যদি একজন তরুণেরও জাতির পিতার প্রতি আবেগ, ভালোবাসা জাগ্রত হয়, তহলেই আমি নিজেকে সার্থক বলে মনে করব। আশা করি, ভবিষ্যতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যান্ড সোসাইটি এরকম আরো অনেক অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে, যার মধ্য দিয়ে একই সঙ্গে তরুণ প্রজন্ম ব্যান্ড সংগীত এর চর্চাও করতে পারবে আবার দেশ ও জাতির পিতার প্রতি তাদের অনুভূতি ও প্রকাশ করতে পারবে। ভুলে গেলে চলবে না, একাত্তরে বিটলস, জর্জ হ্যারিসন এর মতো পাশ্চাত্য ব্যান্ড রা তাদের সংগীতের মধ্য দিয়ে পুরো বিশ্ববাসীর সামনে বাঙালীদের প্রতি পাকিস্তান এর বর্বরতার, নৃশংসতার চিত্র তুলে ধরেছিল, যা আমাদের স্বাধীনতার পিছনে এক গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিল। ঠিক সেভাবেই আমাদের দেশের তরুণেরাও যেন যেকোন অন্যায়, অবিচার এর বিরুদ্ধে তাদের লেখা ও সংগীতের মতো মোক্ষম অস্ত্র দিয়ে প্রতিহত করতে পারে, সেটাই প্রত্যাশা।”

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ঢাকা ইউনিভার্সিটি ব্যান্ড সোসাইটির মডারেটর অধ্যাপক ড.মাহবুবুর রহমান, এসোসিয়েটেড অক্সিজেন লিমিটেড এর উপদেষ্টা মোহাম্মদ সোহরাব হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ এর সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন, ঢাকা ইউনিভার্সিটি ব্যান্ড সোসাইটির সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও উপদেষ্টা রেজওয়ান হাবিব রাফসান।

অনুষ্ঠানটির সভাপতিত্ব করেন ঢাকা ইউনিভার্সিটি ব্যান্ড সোসাইটির সভাপতি এনায়েত এইচ মনন এবং সঞ্চালনা করেন ঢাকা ইউনিভার্সিটি ব্যান্ড সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক এম এইচ খান মুন্না।